আমি একটা দূরপাল্লার বাসে জানালার পাশে বসে ছিলাম। বাইরে দুপুরের রোদ ঝলসাচ্ছিল, আর বাসের ভেতরে ভিড় বাড়ছিল।
আমার মন তখন কেমন যেন অস্থির, হয়তো লম্বা যাত্রার একঘেয়েমির কারণে। হঠাৎ একটা স্টপেজে বাস থামল, আর এক মহিলা উঠে এলেন। সাদা শাড়ি, পাতলা কাপড়ে তার শরীরের বাঁক স্পষ্ট। তার শরীর থেকে ভেসে আসছিল হালকা সেন্টের গন্ধ, যেন জুঁই ফুলের মতো মিষ্টি। আমার পাশের সিট ফাঁকা ছিল, আর তিনি এসে সেখানে বসলেন।
মহিলার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি হবে। তার চুলে হালকা খোঁপা, আর কানে ছোট্ট দুল। চেহারায় একটা শান্ত, কিন্তু আকর্ষণীয় ভাব। আমি চোখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকালাম, কিন্তু তার উপস্থিতি যেন আমার মনকে টানছিল। বাস চলতে শুরু করল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিড় আরও বাড়ল। সিটে আমরা পাশাপাশি, কিন্তু আমাদের মাঝে একটা অদৃশ্য দূরত্ব।
হঠাৎ বাসটা জোরে ব্রেক করল। ভিড়ের ধাক্কায় তিনি আমার গায়ে এসে পড়লেন। তার ঠান্ডা হাত আমার হাঁটুর ওপর পড়ল, আর আমার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আমি শিহরিত হয়ে উঠলাম। তিনি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে উঠে বসলেন, মুখে একটা অপ্রস্তুত হাসি। “সরি,” তিনি ফিসফিস করে বললেন। আমি শুধু মাথা নেড়ে বললাম, “ঠিক আছে।” কিন্তু তার চোখে আমি একটা অদ্ভুত দৃষ্টি দেখলাম—যেন অনিচ্ছার ছায়া, কিন্তু তাতে একটা লুকানো ইশারাও মিশে ছিল।
বাস চলছিল, আর আমার মন তার গন্ধে ডুবে যাচ্ছিল। তার শাড়ির আঁচল হালকা সরে গেলে তার কোমরের এক ঝলক দেখা গেল। আমার হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল। আমি চোখ ফেরাতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। তিনি যেন আমার দৃষ্টি লক্ষ্য করলেন, কিন্তু কিছু বললেন না। পরিবর্তে, তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন, আর তার হাত আবার আমার হাঁটুর কাছে ঘষা খেল। এবার সেটা যেন ইচ্ছাকৃত।
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” আমি সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম, কথা বলে পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করতে চাইলাম। তিনি হেসে বললেন, “একটু দূরে, গ্রামের বাড়িতে। আর তুমি?” তার কণ্ঠে একটা মায়া ছিল, যেন আমাকে আরও কাছে টানছে।
“আমিও… শহরে,” আমি কোনোমতে বললাম। কথা বলতে বলতে আমি লক্ষ্য করলাম, তার শাড়ির আঁচল আরও একটু সরে গেছে। তার শরীরের উষ্ণতা আমার কাছে পৌঁছাচ্ছিল। বাসের ঝাঁকুনিতে আমাদের শরীর বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছিল, আর প্রতিটি স্পর্শে আমার শরীরে উত্তেজনার ঢেউ উঠছিল।
হঠাৎ তিনি আমার দিকে তাকালেন, চোখে একটা দুষ্টু হাসি। “তুমি বড্ড চুপচাপ, কিছু বলো না কেন?” তার কথায় আমি হাসলাম, কিন্তু কী বলব বুঝতে পারলাম না। তিনি আরও কাছে ঝুঁকে বললেন, “এই ভিড়ে কিছু মনে করো না, ঠিক আছে?” তার শ্বাস আমার কানের কাছে এসে লাগল, আর আমি যেন তার গন্ধে পাগল হয়ে গেলাম।
বাসের বাকি যাত্রাটা যেন একটা স্বপ্ন। তার শরীরের হালকা স্পর্শ, তার সেন্টের গন্ধ, আর তার চোখের ইশারা আমাকে এক অজানা কামনার জগতে ডুবিয়ে দিল। আমরা কথা বলতে বলতে আরও কাছে এলাম। তার হাত একবার আমার বাহু ছুঁল, আরেকবার আমার হাতের ওপর দিয়ে গেল। প্রতিটি স্পর্শ যেন ইচ্ছাকৃত, যেন সে আমাকে পরীক্ষা করছে।
শেষে যখন তার গন্তব্য এল, তিনি উঠে দাঁড়ালেন। শাড়িটা ঠিক করতে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন, আর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, “যাত্রাটা বেশ মজার ছিল, তাই না?” আমি শুধু হাসলাম, কথা বলার শক্তি ছিল না। তিনি নেমে গেলেন, কিন্তু তার গন্ধ আর স্পর্শ আমার মনে রয়ে গেল।
সেই চলন্ত বাসের সফর আমার জীবনে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে রইল। তার সঙ্গে সেই ক্ষণিকের ঘনিষ্ঠতা, তার শরীরের ছোঁয়া আর গন্ধের জাদু আমাকে চিরকাল তাড়া করে বেড়াবে।